মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে নারী মৈত্রীর আয়োজনে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের করণীয় শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৫ Time View

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রান হারাচ্ছেন ১ লক্ষ ৬১ হাজার জন মানুষ। প্রাণঘাতী এই নেশাদ্রব্যের হাত থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানান তরুণ সমাজ। গত শনিবার (২১ সেপ্টেবর) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বেসরকারী নারী উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’র আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন তরুণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তরুণ সদস্যরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি তুলে ধরেন।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ডঃ গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তনুশ্রী হালদার,সহযোগী অধ্যাপক, জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং ডিপার্টমেন্ট, শেরে-ই- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার চ্যানেল আই এর উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার জনাব মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা এবং আতাউর রহমান, এডভোকেসি ম্যানেজার সিটিএফকে।

অনুষ্ঠানের মূল বিষয় উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ লোক তামাক ব্যবহার করে এবং তামাক ব্যবহার জনিতরোগে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করা প্রয়োজন। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা: তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা: ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা; ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। দেশকে তামাকের ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আজকের এই তরুণ সমাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।

সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, “সুস্থ প্রজন্ম বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের বিস্তার হয়েছে ভয়াবহভাবে। দেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং এর নিচে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুই ধূমপায়ী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিশোর-তরুণদের নিজ অবস্থান থেকে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি”

তনুশ্রী হালদার বলেন, “দেশে ব্যাপকহারে ই-সিগারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভেপিং এর ব্যবহা্রের প্রবণতা তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যা দেশের জন্য অশনিসংকেত। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এরইমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি”

মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল—এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। তামাকের মহামারী সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’অর্জনের লক্ষ্য পূরণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরী। অল্পবয়সীদেরকে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডে আসক্ত করতে কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বা সামনের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য সহজলভ্য করে তোলা হচ্ছে। বিশেষত, শিশুদের পছন্দের খাবার যেমন-ক্যান্ডি, চিপস ইত্যাদির কাছাকাছি তামাক পণ্যগুলো সাজানো এবং বিক্রেতাদের বিভিন্ন বিপণন সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই সংশোধীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করতে হবে”

হুমায়রা সুলতানা বলেন, “নারী ও শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি উল্লেখ করে বলেন, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। গর্ভবতী নারী ও শিশুরা ধূমপান না করেও প্রতিনিয়ত তামাকজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই পাবলিক প্লেস, গণপরিবহনে ও রেস্তোরাঁয় ধূমপান যাতে কেও না করে সেই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে তরুণদের সোচ্চার হওয়ার জন্য বলেন তিনি।

তরুণ ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াতে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে আহ্বান করেন উপস্থাপিকা, দীপ্তি চৌধুরী। নারী মৈত্রীর আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন “ বর্তমান যুগে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই”

এসময় তরুন সমাজকে ধুমপান ও তামাক গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে তামাকের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখার আহবান জানান দীপ্তি চৌধুরী।

এছাড়াও তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে নারী মৈত্রীর পাশে থাকার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

“তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজ যথাযথ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করেন প্রধান অতিথি-যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, “তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষের প্রাণ ঝরছে। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে তরুণেরা তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে তাদের কন্ঠস্বরকে জোড়ালো করবে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকে তামাকের প্রভাবমুক্ত রাখবে এবং অন্যান্যদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাতে মন্ত্রীসভায় সংশোধিত আইনটি দ্রুত উত্থাপন করেন সে লক্ষ্যে সহযোগিতা করা এবং অনুমোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো দাবি জানানোর জন্য এই তরুণ সমাজকে কাজ করে যাবার জন্য তিনি আহবান জানান।’’।
এছাড়াও তামাকের বিরুদ্ধে সংশোধিত আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ভাবে উপস্থাপন করার আশ্বাসও দেন তিনি।

এই কর্মশালায় ১৬টি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তামাকের বিরুদ্ধে নিরলস কাজ করে যাবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন এবং তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে এগিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জাগান তারা। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন নারী মৈত্রী’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর,খালেদ-বিন-ইউছুফ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102