শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক কড়চা

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৭ Time View

একরামুল হক দীপু

একজন মেধাবী শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁকে পদায়নের আগ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ডাকা হলো। আপনার দাদা কি পার্টি করতেন নানা কোন দলের? মামা চাচা চৌদ্দ গোষ্ঠীর ফিরিস্তি নেয়া হল ।গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মেধাবী সেই শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে পারেন নি। এটা ছিল বিগত রেজিমের খুব স্বাভাবিক ঘটনা।

জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন এর পর এই সকল প্রবনতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে এটি জন আকাঙ্ক্ষা। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর বড় পরিচয় হোক তাঁর মেধা ও যোগ্যতা। রাজনৈতিক পরিচয়ে পদায়ন চিরতরে নিষিদ্ধ হোক এটাই সর্ব সাধারণের প্রত্যাশা। সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও তাই ছিল।

বিগত দশকগুলোতে আমাদের রাজনীতি সমাজ সংস্কৃতি স্পষ্টতই এক অদ্ভুত বিভাজনের ভেতর হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। বিভাজনটা এমন – হয় আপনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের না হয় আপনি রাজাকার। হয় আপনি জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থক নয়তো আপনি ভারতের দালাল। বস্তুত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকেও যে দেশমাতৃকার সেবা করা যায় দেশকে ভালোবাসা যায় তা এই দুই দলের নেতাকর্মীদের ধারণার মধ্যে ও ছিল না। এমনকি আমরা যারা কবি সাহিত্যিক লেখক তাদের ও রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। একজন সত্যিকারের লেখক কবি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করতেই পারেন কিন্তু তিনি কখনোই এ দলের লেজুড়বৃত্তি করেন না।এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ দলবাজি পছন্দ করেন না, প্রচলিত রাজনীতি পছন্দ করেন না। ভোটের রাজনীতিতে এই মানুষগুলো অসহায়। দেশে যদি না ভোটের প্রচলন থাকতো তাহলে হয়ত এই দলগুলো বুঝতে পারতো তাদের জনপ্রিয়তা কতটা। কিন্তু তাঁরা তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কখনোই না ভোটের বিধান রাখতে রাজি হননি।

পশ্চিম পাকিস্তানের তেইশটি বছরের শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সাম্য সামাজিক ন্যায়বিচার, শোষণ মুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও অর্থনৈতিক মুক্তি । কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিগত তেপান্ন বছরেও আমাদের সেই কাঙ্খিত মুক্তি ও স্বাধীনতা আসেনি। বড় দুটো রাজনৈতিক দল এই সুদীর্ঘ সময়ে আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নাই। মাঝখানে দশটি বছর এই হতভাগ্য জাতির কেটে গেল এক স্বৈরাচারী জেনারেলের বুটের নিচে। দেশ স্বাধীন এর পর থেকে অদ্যাবধি রাজনৈতিক দলগুলোর লুটপাট দলীয়করণ আর রাষ্ট্রীয়‌ গুন্ডামির কারণে শোষিত লাঞ্ছিত লক্ষ লক্ষ মানুষ নীরবে নিভৃতে রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ এই জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক সচেতন হলেও উপযুক্ত রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এর অভাবে জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ পায়নি। ফলে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে যা মাঝে মধ্যেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় রূপ নিত।

আমাদের রাজনীতিতে আরও বড় দুটো শক্তির ভুমিকা‌ লক্ষণীয়। ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনৈতিক দলগুলো নীতি ও আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতির কথা বললেও জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। বস্তুত দেশ স্বাধীন এর পর থেকেই এই দলগুলো কখনো প্রকাশ্যে কখনো গোপনে ক্ষমতাসীনদের লেজুড়বৃত্তি করছে । কখনো নিজেদের মধ্যে অন্তর কলহে লিপ্ত হয়েছে। মুখে নীতি আদর্শের কথা বললেও ভোটের রাজনীতিতে এই মানুষগুলো জনগণের দ্বারা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ঠিক একই পরিনতি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর। এরা লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে সভা সমাবেশ করলেও ভোটের সময় মানুষ এদের প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের রাজনীতিতে বাম ও ইসলামপন্থী দলগুলো জনগনের কাঙ্খিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তাঁদের নীতি আদর্শের ব্যাখ্যায় ব্যার্থ হয়েছে।

সঙ্গত কারণেই জনগণের সামনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিকল্প কিছু ছিল না। এক দলের‌ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ অন্য দলটিকে ক্ষমতায় এনেছে। পর্যায়ক্রমে এই দুই দল শাসন ক্ষমতায় থেকেছেন। সুদীর্ঘ সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার কুফল হচ্ছে এই দুই দলের নেতাকর্মীরা দেশ ও দেশের মানুষের মালিক বনে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। দখলবাজি চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দলীয়করণের সংস্কৃতি এখন রাজনীতির সমার্থক। দলীয়করণের ফলে আমাদের গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলো ধংসের দ্বারপ্রান্তে। সকল পেশাজীবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত যা জাতীয় জীবনে অশনিসংকেত। ইতিহাস বিকৃতির ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম অন্ধকারে। অব্যাহত লুটপাটে ও মাথাপিছু ঋনের বোঝায় জাতি আজ মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না।

দুর্বিসহ এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণ অভ্যুত্থান জাতির সামনে নতুন আশা নতুন সুযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে রাষ্ট্র মেরামতের কাজটি শুরু করা দরকার। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার , অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার প্রয়োজন। সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার। আর কখনো যেন‌ রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর থেকে তিন শত দানব বের না হতে পারে সেটি দেখা দরকার। পেশিশক্তি কালোটাকা আর ব্যবসায়ী যেন রাজনীতি দখল করতে না পারে । দলের ভেতরে গনতন্ত্রহীনতা দুর হোক। শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি হোক দেশ গঠনে হাতিয়ার।রাজনীতি যেন রাজনৈতিক কর্মির হাতে থাকে সেই প্রত্যাশা রইল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102