আবুল কাশেম রুমন,সিলেট:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সিলেটের মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ অফিসে। লুঠ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার গাড়ি,আসবাবপত্র সহ অনেক প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। যাহা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে অনেক দিন। সরকার পতনের পর কিছু দিন ট্রাফিক পুলিশ কর্মবিরতী নিলে সিলেট নগরীর রাস্তার নিয়ন্ত্রন ফেরাতে দায়িত্ব নেয় ছাত্র ছাত্রী ও আনসার সদস্যরা। নতুন উপদেষ্টারা দেশ চালাতে দায়িত্ব নেয়ার পর পুলিশ বাহিনীকে কর্মস্থলে ফেরাতে বাধ্য করা হলেও এখনও সেই সময়ের ভয় আর আতংক চোখ মুখে দেখা যায় তাদের। ছাত্র আন্দোলনে সিলেটের মেট্রোপলিটন ট্রাফিক অফিসে সব কিছু একটি অসাধু চক্র লুঠ ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যায়াত ঘটছে বলে জানান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় এখন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসন, গাড়িগুলো শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত অবৈধ গাড়ি বা ফিটনেসবিহীন গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টরা।
গত এক সপ্তাহ থেকে সিলেটে যানজট বাড়তে শুরু করেছে নগরীর সবকটি পয়েন্টে যানজট চোখে পড়ার মতো। দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশেরা অবৈধ গাড়ি বা ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযান না নেওয়ার কারণে শহরে সুযোগ বুঝে একটি অসাধু মাসিক টোকনদারী নিবন্ধন ছাড়া অবৈধ অটোরিক্সা সিএনজি ব্যবসায়ীরা দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সাথে অর্থের বিনিময়ে ওই গাড়িগুলো শহরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরী থেকে শুরু করে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট,সালুটিকর,বিছনাকান্দি, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার ও দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে এভাবেই চলছে এসব অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিক্সা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেট অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বৈধ সিএনজি চালিত অটোরিক্সা রয়েছে ২১ হাজার ২৩২ টি। এর মধ্যে প্রায় ৫ বছর আগে দেড় হাজারের উপরে সিএনজি অটোরিক্সার নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনের কোন সুরাহাও হয়নি। এছাড়া এর বাইরে, কোনও আবেদন না করেই আরও দুই সহ¯্রাধিক সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলছে।
এসব অটোরিক্সার পেছনে লেখা রয়েছে শুধু আবেদিত বা অনটেস্ট। নতুন করে কয়েক শত গাড়ি চলছে ভূয়া অকশন জিডি নাম্বার ব্যবহার করে। বর্তমানে এ গাড়ি গুলো চলছে ঢাক ঢোল বাজিয়ে রোডে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের ছত্রছায়ায় নগরীতে চলাচল করছে এসব অবৈধ অটোরিক্সা। পুলিশ, সমিতির নেতা, বিআরটিএ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব সিএনজি অটোরিক্সা নগরীতে চলছে। অবৈধ অটোরিক্সাকে ‘বৈধতা’র বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠনের শাখা রয়েছে আম্বরখানা ও সালুটিকর দক্ষিণ সুরমার কদতমলীর ওভার ব্রিজে। এই শাখার অধীনে অবৈধ অটোরিক্সা রয়েছে হাজার খানেক। প্রতিটি গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা রয়েছে- ‘সিলেট-থ-১২-আবেদিত’ অথবা অকশন নং জিডি এতো। প্রতিটি অটোরিক্সা থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেন অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ওই টোকেনে চলা যায় এক মাস। প্রতি মাসে টোকেন না নিলে সমস্যায় পড়তে হয় চালকদের। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, অবৈধ অটোরিক্সার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের স্বাক্ষরিত টোকেন দিয়েই বছরের পর চলে অবৈধ ‘সিলেট-থ-১২-আবেদিত’ অথবা অকশন নং জিডি অটোরিক্সাগুলো। নিবন্ধনহীন সহস্হাধিক সিএনজি অটোরিক্সা বাবদ প্রতি মাসে উত্তোলন করা হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। চালকরা জানান, উত্তোলিত টাকার ভাগ পান সমিতির নেতা, এয়ারপোর্ট থানা, আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ি, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট থানা, দক্ষিণ সুরমা পুলিশ।
গত কয়েক দিন নগরীর আম্বরখানা, টিলাগড়, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিআরটিএ’র অনুমোদন ছাড়াই (সিএনজি ১ অনটেস্ট) আবারো কোনটি আবেদিত অথবা অকশন লিখেই চলছে নগরী ও নগরীর আশপাশ উপজেলা রোড গুলোতে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ এডিসি রাখী রাণী র সাথে কথা বললে তিনি জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ট্রাফিক বিভাগে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি ও লুঠ পাট হয়েছে। এখন আমরা শুধু মাত্র রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আসতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। আমরা এখন পর্যন্ত নিবন্ধন ছাড়া অবৈধ অটোরিক্সা বা অন্যান্য গাড়ি গুলো বিরুদ্ধে কার্যক্রম বা মামলা চালু করতে পারি নাই। ঢাকায় হেড অফিসে সকল ধরণের কার্যক্রমের আদেশের জন্য প্রস্তবনাও পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে আশা করি আমাদের কার্যক্রমও চালু হবে। এবং সকল নিবন্ধন ছাড়া অবৈধ অটোরিক্সা সিএনজি অন্যান্য গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।