এম. কে. জাকির হোসাইন বিপ্লবী
জীবনে এমন কিছু সম্পর্ক আছে যেগুলোর অভাব অনুভূত হয় প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। বাবা সেই সম্পর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম।বাবা শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি আশ্রয়, একটি নিরাপদ ছায়া, একটি আদর্শ। যিনি সব বাধা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সন্তানের জীবনে আলো ছড়ান। কিন্তু যখন সেই ছায়া হারিয়ে যায়, তখন জীবনের প্রতিটি বাঁকে একটি গভীর শূন্যতা তৈরি হয়।আরপৃথিবীতে সব কিছুর শূন্যতা পূরণ করতে পারলেও, বাবা নামক শব্দটির শূন্যতা কখনো পূরণ হয়না।আর সেটি হচ্ছে বাবার শূন্যতা। বাবা এমন এক বট বৃক্ষ, যা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাবা শব্দটি, একটি অনুপ্রেরণা। বাবা যত দিন বেঁচে থাকে, ততদিন বাবার দোয়া সন্তানের মাথার উপরে ছায়া হয়ে থাকে। আর বাবা যখন মারা যায়, তখন বাবার দেওয়া উপদেশগুলো সন্তানের জন্য এক পথ প্রকাশিত স্মৃতিচারণ। ভাবার শূন্যতা কতটা বেদনাদায়ক তা বুঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। পৃথিবীতে যাদের বাবা নেই তারা এক অপ্রকাশিত দুঃখ বুকে চাপা রেখে জীবন যাপন করে। আর যাদের বাবা বেঁচে থাকার পরেও, পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সন্তানদের কাছে থেকে অনেক দূরে, সেসব সন্তানরা এক অপ্রকাশিত মৃত্যুর যন্ত্রনা বুকে নিয়ে জীবন যাপন করে।
বাবাকে নিয়ে জীবনের যতো স্মৃতি:-
আমি যখন ছোট ছিলাম, বাবা ছিলেন আমার প্রথম নায়ক। কোনো সমস্যায় পড়লেই তার কাছে ছুটে যেতাম। ছোট ছোট বিষয়ে তার পরামর্শ আমাকে আশ্বস্ত করত। তার উপস্থিতি যেন আমাকে সব ভয় থেকে মুক্তি দিত। কিন্তু কৈশোরে এসে হঠাৎ করেই সেই ছায়া হারিয়ে ফেলি। তখনই প্রথম বুঝতে পারি, বাবা শুধু একজন মানুষ নন, তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রেরণার প্রতীক।
বাবা ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি চেয়েছিলেন আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে। সন্তানের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য, এক নিদ্রাহীন লড়াকু শ্রমিকের নামেই হচ্ছে বাবা। নিজে ত্যাগ স্বীকার করেও আমাদের জীবনে আনন্দ আনতে কখনো কার্পণ্য করেননি। তার কঠিন মুখে লুকিয়ে থাকা স্নেহের গভীরতা আমরা তখন বুঝিনি, যখন তিনি আমাদের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করতেন। সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য, বাজারে গিয়ে নাস্তার টাকাটা পকেটে রেখে দেয়, কখন সন্তান চাইবে আর সেই টাকাটা সন্তান কে দেবে।বাবার শূন্যতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানসিকও। জীবনের অনেক মুহূর্তে একজন সন্তানকে বাবা সাহস দেন, দিকনির্দেশনা দেন। যখন সেই অবলম্বন হারিয়ে যায়, তখন পথ চলা কঠিন হয়ে পরে। অনেক সময় সফলতার মুহূর্তেও মনে হয়, ‘বাবা যদি পাশে থাকতেন, আজকের এই আনন্দের মুহূর্তে তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।’
এই শূন্যতার মধ্য দিয়েই শিখেছি, বাবার অনুপস্থিতি আমাদের আরও শক্ত হতে শেখায়। বাবার শূন্যতা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, জীবনে এমন কিছু করে যেতে হবে, যা তাকে গর্বিত করত। বাবার শিক্ষাগুলো জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পথ দেখায়।
আজ বাবা নেই, কিন্তু তার স্মৃতি, তার আদর্শ বেঁচে আছে আমার হৃদয়ে। বাবার শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না, কিন্তু এই শূন্যতাই আমার জীবনকে নতুন করে গড়তে অনুপ্রাণিত করে।