আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সফল হোক যে সকল শ্রমিক ভাইয়েরা দেশের উন্নয়ন করতে গিয়ে পরান দিয়েছেন তাদের কথা স্মরণ করে আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস মনের কথা লিখতে চাই । আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সবাব কাছে মে দিবস নামে পরিচিত। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম দিন পালন করা হয় এই দিবস।বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটি রাখেন।অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।একটি দিনের ছুটির জন্য কত অনুরোধ তবু তাদের ছুটি হয়না। শ্রম দিতে গিয়ে হারিয়েছে প্রিয় জন নিজের জীবন দিয়েছে কিনা রাজ পথে গিয়ে।মা বাবা সবাই কাঁদে দিন রাত তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে।৬০-সেকেন্ডে ১মিনিট,৬০-মিনিটে ১ঘন্টা,প্রতি ৪-ঘন্টায় ১প্রহর,১২-ঘন্টায় ১দিন ।
২৪-ঘন্টায় দিনরাত,৭-দিনে হয় সপ্তাহ,
৩০-দিনে হয় মাস,এমন করে চলতে থাকে মাসের পরে মাস। ৩৬৫ দিন নিয়ে হয় বছর।
৩৬৪দিনই ডিউটি দেয় শ্রমিক ভাইয়েরা।
সারাটাদিন গাধার মত খাটিয়ে শ্রমিকের রক্ত পানি করেও সঠিকভাবে ন্যায্য বেতন দেয়না।
মালিকরা শ্রমিকদের অর্থ ঠিকঠাক না মিটিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে ঘুমিয়ে থাকেন,সেই সব মালিকরা মে দিবসে মঞ্চে উঠে শ্রমিকদের জন্য কি সুন্দর করে মায়া কান্না,দেখায় এই হল আমাদের সমাজের যারা হলেন প্রতিষ্ঠিত মানব জনম স্বীকৃতি পেয়েছে তারা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে হাজার হাজার মানুষের দাবি দেওয়া মুহূর্তের মধ্যে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারে।শ্রমিক রাই রাজপথের ধুলা মেখে উন্নয়ন করেন।মালিক বা স্যারেরা থাকেন এসি রুমে বসে।
কষ্ট যাহা করে থাকেন শ্রমিক ভাইরা।
তবু তারা ছুটি পায়না তেমন কোন অসুখে।
বন্ধ দিলে বেতন কেটে নেয় মালিক মাহাজন।
চাপের মুখে থাকে তারা সারাক্ষন।
এই মে দিবস সম্পর্কে একটু ইতিহাস জানি,
আমেরীকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের চত্বরে সংঘটিত শ্রমজীবি মানুষের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে বিশ্বশ্রমিকের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ১৮৮৬ সালের ১লা মে স্মরণ এবং তাদের সেই চেতনায় নতুন ভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে জাগ্রত থাকার শপথ গ্রহণের একটা বিশেষ দিন এই মে দিবস ।সেই দিনটাকে
বিশ্বের মানুষরা মনে রেখে আজকের দিনটি পালন করেন সবাই। নানাবিধ উপাধিতে আজকের দিনটিতে এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় । মে দিবসকে বলা হয় – আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস । তাছাড়া ও এ দিবসটি – আন্তর্জাতিক শ্রমিক হত্যা দিবস , লেবার ডে , ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কার ডে ইত্যাদি । মেহনতি জনতার আন্তর্জাতিক সংহতি ও সংগামের স্মৃতিস্মারক এই দিবস । বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন এ দিবস ।
মে দিবস কেন ? শ্রমিকদের অধিকার আদায় এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ দিবসের আয়োজন । মালিক – শ্রমিক সম্পর্ক , দায়িত্ব ও কর্তব্যকে স্মরণ করার জন্য এ দিবস । মালিক পক্ষের শোষণ , বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র সেই সংগ্রামের স্মৃতি ও চেতনায় নতুন ভাবে জাগ্রত হবার লক্ষ্যে এ দিবসের আয়োজন ।মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃআজ থেকে ১৩৭ বৎসর পূর্বে ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার শিকগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস ও কর্মক্ষেত্রে মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে হে মার্কেটের চত্বরে সমাবেশ করতে গেলে রাস্ট্রশক্তির নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিকাগোর হে মার্কট চত্বরে পুলিশের বন্দুকের গুলি বুকে ধারণ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১১ জন শ্রমিক বিশ্ব শ্রমিক জাতিকে নতুনভাবে বাঁচবার প্রেরণা ও শিক্ষা দিয়ে চলে যান পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য । প্রতিষ্ঠা করে যান আজকের মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ।এ ঘটনার পূর্বে শ্রমিকদের করতে হতো দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম । করতে হতো তাদের মানবেতর জীবন যাপন । মিলতো নগণ্য পারিশ্রমিক । দাসত্ব জীবন ছিল কারো কারো । মালিক পক্ষের ইচ্ছায় শ্রমিকদের উপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন ।সে সময় ছিলনা বিশ্বের কোথাও শ্রমিক আইন । শ্রমিকদের মানবিক অধিকার , অর্থনৈতিক অধিকার বলতে কিছুই ছিলনা ছিলনা তাদের স্বাধীনতা । ছিলনা চাকরীর স্থায়িত্ব ও ন্যায় সঙ্গত পারিশ্রমিকের কোন নিশ্চয়তা।এরই পরিপ্রেক্ষিতে এইসব মানবতা বিরোধী কর্মের অবসান এবং শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণ , প্রাপ্য অধিকার আদায় , মর্যাদা সমুন্নত রাখতে তথা মেহনতি মানুষদের জন্য মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৪ সালে শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন । তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা ১৮৮৬ সালের ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ।তাদের এ দাবী মালিক পক্ষ মেনে না নিলে ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে সন্ধ্যায় শিকাগোর হে মার্কেট চত্বরে আমেরিকা ও কানাডার প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক জোটবদ্ধ হয়ে সমাবেশ করে । শ্রমিকদের সমাবেশের মুল কার্যক্রম শুরু হবার অল্প কিছুক্ষণ পরই অদূরে দন্ডায়মান পুলিশ বাহিনীর নিকটে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরিত হলে এক পুলিশ তাতে নিহত হয় । সাথে সাথেই পুলিশ বাহিনী সমাবেশের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকলে তাতে ১১ জন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন । পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় আরো ৮ জন শ্রমিককে ।১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর এক প্রহসনামুক বিচার আয়োজনের মাধ্যমে উক্ত ৮ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের ফাঁসী কার্যকর করা হয় । বাকী দুইজনের মধ্যে একজনকে দেয়া হয় ১৫ বৎসরের কারাদন্ড , আর অপর জন কারাগারের ভিতরেই আত্মহত্যা করেন । বোমা বিষ্ফোরণকারীর পাওয়া যায়নি কোন হদিস।১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে‘কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । সেই থেকে প্রতিবৎসর ১লা মে’কে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বিশ্ববাসী।পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালের ২৬শে জুন পুলিশ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত ৮ জন শ্রমিককে নিরাপরাধ বলে ঘোষনা দেয়া হয় ।আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস দীর্ঘ বছর শিল্প সাধনা করি সমাজের অবহেলিত মানুষের কর্মকাণ্ড, দুঃখ দুর্দশা চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরি এবং মনের কিছু কথা লেখার চেষ্টা করি।খুলনাতে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি যার নাম খুলনা আর্ট একাডেমি।
বাংলাদেশের সকল চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে় আমার শিক্ষার্থীরা পড়ছেন ২১৬ জন ।তাদের সকলকে দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করি ।সব সময় অবহেলিত মানুষের কর্মকাণ্ড ,দেশদ্রোহীদের কর্মকান্ড ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে সহযোগিতা করি ।আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে পরিবর্তন করি শুধুমাত্র সরকারের উপরে নির্ভরশীল হলে কখনোই সুন্দর কিছু তৈরি করা সম্ভব না। আপনি নিজে একজন দেশ প্রেমিক হিসেবে ভালো কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশের প্রতি ভালোবাসা ঠিক শৈশব থেকে শুরু হয়েছিল।তাই আপনিও দেশকে ভালবাসতে শিখুন। নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখুন ভালো কাজের সঙ্গে। আপনার প্রতিবেশী অবাঞ্চিত অবহেলিত মানুষের সুখ দুঃখে পাশে দাঁড়ান ।অর্থ দিয়ে না পারলে বুদ্ধি দিয়ে তার সঙ্গে থাকুন। সর্বশেষ আমি বলব আসুন এই পহেলা মে আমরা সবাই এই প্রতিজ্ঞায় দিনটি পালন করি “শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই” মহান মে দিবসের এ প্রতিপাদ্যের আলোকে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের অঙ্গীকার করা উচিৎ।
বিঃদ্রঃ শ্রমিক ভাইদের নিয়ে আমার এই লেখাটি পড়ার জন্য সব পাঠককে ধন্যবাদ।