-:চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস:-
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষ বনায়ন তৈরি করে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল রক্ষায় অবদান রাখছে। আমাদের দেশে এ ধরনের প্রবণতা বেশি একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।আর যারাও আছে তাদের মুল্যায়ন না করে তিরষ্কার টাই বেশি করা হয়। আর তাদের সম্পর্কে তুলে ধরার মতো কোন সংস্থা বা কোন মিডিয়া এগিয়ে আসেনা।তবু তারা তাদের দ্বায়িত্ব থেকে পিছিয়ে পড়ে না।
এমন একজন বন্য পশুপ্রেমী ব্যক্তির জীবনী তুলে ধরছি। যদি এই লেখাটি পড়ে মানুষ বন্য প্রাণীদর প্রতি যত্নবান হয়, তবেই এই লেখাটি স্বার্থক।
আমি একজন চিত্রশিল্পী তাই সমাজ নিয়ে একটু গবেষণা করার চেষ্টা করি ছোটবেলা থেকেই।
হিরন ময় সমদ্দার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পশুপাখির ছবি পোস্ট করে।আমি তার পোস্ট দেখি দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে। আমার বয়স বর্তমানে ৪৩ বছর। এর মধ্যে যতটুকু দেখেছি, এই পর্যন্ত যতটুকু শিক্ষা গ্রহণ করেছি তাতে আমি বলবো প্রান থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না ।সকল পোষা প্রাণী অন্যান্য প্রাণীর প্রতি দয়া করুন তাহলে তারাও আপনার প্রতি সদয় হবে।এটা আমি মনে করি।প্রাণীগুলি বোধগম্য, বুদ্ধিমান, সংবেদনশীল, এবং আনন্দদানকারী। আমরা বাচ্চাদের যেভাবে যত্ন নেই তেমনি তাদের ও যত্ন নেওয়া উচিত।একটি প্রাণীর চোখের মধ্যে দুর্দান্ত ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সবাই তা বোঝার ক্ষমতা রাখেনা। বোবা প্রাণীদের চোখের ভাষা বোঝে সেই জন,যেই জন পশু পাখিদের মন থেকে ভালোবাসেন।আমি মনে করি বাঁচার অধিকার সবার আছে সে কথা আমরা ভুলে যাই। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনী না জানলে মানব জীবন বৃথা। তেমনই একজন মানুষ হলেন হিরন ময় সমদ্দার, পিতা: যতীন্দ্র নাথ (মানিক)সমদ্দার,মাতা: আশা রানী সমদ্দার,গ্রাম :৪নং ওয়ার্ড, বেতাগী পৌরসভা, বেতাগী, বরগুনা,শিক্ষাগত যোগ্যতা :ইংরেজী সাহিত্যে এমএ, স্ত্রী :মনিকা সমদ্দার বি এ এল এলবি,বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরিশালে কর্মরত। একেই বলে প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি।যিনি শিক্ষা গ্রহণ করে সমস্ত প্রানীদের সুরক্ষা দেয়।
তার দুটি মেয়ে, একটি ছেলে।বড় মেয়ে অনিন্দিতা প্রিয়ন্তী এ বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে,ছোট মেয়ে পারমিতা রুপন্তী নবম শ্রেনীতে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত,ছেলে অনিন্দ্য অনির্বান সান্নিধ্য বয়স সারে তিন বছর। তিনি আশা এন জিওতে ১৯৯২ সন থেকে ২০২১ সন পর্যন্ত ২৯ বছর জব করেছেন। সর্বশেষ আর এম পদে থেকে পারিবারিক প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় অবসরে এসেছেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই পশুপাখি এবং গাছ পালা নিয়ে থাকতে ভাল বাসতেন এবং কোন অসুস্থ প্রানী পেলে গ্রামে বা দুরে ছুটে গিয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে বসেই ঔষধ খাইয়ে উপযুক্ত সেবা করে সুস্থ করে বনে ছেড়ে দিতেন।এমনকি স্বীকারির ফাদে পরা অনেক প্রাণী(ডাহুক,বক ইত্যাদি) নিজের টাকায় ক্রয় করে অবমুক্ত করে দিয়েছেন।এর আগে তিনি মঠবাড়িয়ায় একটি অজগর উদ্ধার করে বনে মুক্ত করেছিলেন, সেই ঘটনা আজকাল পত্রিকায় নিউজ হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার। সে ঘটনার পর থেকে অনেকেই জেনেছে।এখন তার ইউনিয়নের বাহির থেকেও ফোন আসে, যদি কোন ভালো মানুষের হাতে পড়ে। সেখানেই ছুটে যায় হিরন ময় সমাদ্দার। তিনি গলাচিপায় পেচা,এবং ছয়টি খেক শিয়ালের বাচ্চা জনগনের হাত থেকে উদ্ধার করে তিন মাস খাইয়ে বড় করে বনে ছেড়ে দিয়েছিলেন।বেতাগীতে ভুতুম পেচা উদ্ধার করে ছেড়েছিলেন।দারাস সাপ উদ্ধার করে ছেড়েছিলেন।এ কাজে তিনি খুব আনন্দ অনুভব করেন।তার স্ত্রী সন্তানরা এ কাজে বাধা দেয়না বরং খুব উৎসাহ দেয়, সহযোগীতা করে।বর্তমানে তার কাছে পাচটি কুকুর, ০২ টি বিড়াল, পাচটি অসুস্থ শালিক পাখি একটি কাক রয়েছে,দুইটি শালিক। বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত ছিল, একটির এক পা নেই।তার স্ত্রী সন্তানরা তার অনুপস্থিতিতে এগুলোকে যত্ন করে এবং খাবার খাওয়ায়।এছাড়া অনেক প্রকার বিপন্ন গাছ তার সংগ্রহে আছে। তার মনের ইচ্ছা তিনি ভবিষ্যতে একটি অসুস্থ পশু ও পাখি সংগ্রহশালা এবং চিকিৎসা কেন্দ্র করতে চান। আসুন সে সম্পর্কে একটু জানি।প্রাণী নিয়ে গুনী জনরা যা উক্তি করে গেছেন:-
১. প্রাণী হলো সহমত বন্ধু- তারা কখনও কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেনা, কোন সমালোচনাও করে না।
—জর্জ এলিয়ট
২. একটি কুকুরের সাথে বন্ধন ঠিক ততটাই স্থায়ী যতটা এই পৃথিবীর বন্ধন হতে পারে।
— কনরাড লরেঞ্জ
এই গুনীজনদের কথা মতো আমি আপনি চলার চেষ্টা করি। আপনি তাদেরকে সেবা না দিতে পারেন সমস্যা নেই তাদের রাস্তাঘাটে ক্ষত অবস্থায় দেখলে আপনি পুনরায় তাকে আঘাত করে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিবেন না এটাই আমার অনুরোধ। আমাদের পশুপ্রেমী হিরন ময় সমাদ্দার। বর্তমানে তিনি বরিশালে থাকেন, ছোট একটা ব্যবসা আছে, মাঝে মাঝে বেতাগীর বাড়িতে আসেন দাদা অদ্য দুপুরে বরগুনার বেতাগীতে তার বাড়ির পাশেই সবজি ক্ষেতে কৃষকের দেয়া জালে আটকে পড়া বড় আকারের একটি গুই সাপ বাচ্চারা দেখে তাকে খবর দেয়। একেবারে মরনাপন্ন অবস্থায় গর্ভবতী গুই সাপটি দেখে তিনি বাসা থেকে একটি কাঁচি নিয়ে ভাতিজা বিটুল এবং সাগর এর সহায়তা নিয়ে হাত দিয়ে ধরে বসেন। ওরা জাল কেটে দেয় । পরে পার্শ্ববর্তী জংগলে গিয়ে মুক্ত করে দেন। সম্পুর্ন সুস্থ অবস্থায় চলে যায়।অসহায় অনেক প্রানী এর আগেও তিনি উদ্ধার করেছেন ।বর্তমানে চার মাস যাবৎ একটি অসুস্থ কাক ও আছে কয়েকদিনের মধ্যে উড়ে যেতে সক্ষম হবে তিনি আশা করেন। এই প্রসঙ্গে আমি বলবো ‘বন্য পশু পাখি আমাদের অনেক ধরনের উপকার করে। পাখি আমাদের ফসলের ক্ষতি করা পোকাগুলো খেয়ে ফসল ভালো রাখে। পাখির সুরে আমাদের মন ভালো রাখে। এটি আমাদের দেশের সম্পদ ।আমাদের দেশটা বৈশ্বিকভাবেই বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সহায়ক। বেশ কয়েকটি প্রাণীর সংরক্ষণে এখনই মনোযোগ না দিলে খুব দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এগুলো হলো বনের হাতি, কয়েক জাতের হনুমান ও বানর ইত্যাদি। আমাদের উচিৎ এসব বন্যপ্রাণীদের মাংস খাওয়া পরিহার করা, স্বীকারিদের প্রতিহত করা, পারলে ওদের ধরা পাখি পুনরায় বনে ছেড়ে দেয়া।আমার মতে, এসব প্রাণীকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।আমি মনে করি আত্মা থাকার অর্থ হয় ভালোবাসা, আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করতে সক্ষম হওয়া, তাহলে একটি আমি মনে করি বন্য প্রাণী অনেক মানুষের চেয়ে ভালো। এই পৃথিবীতে যত পশু পাখি প্রেমী ব্যক্তিরা রয়েছে সবার জন্য শুভ কামনা করে আমার লেখাটি এখানে শেষ করছি।
তথ্য সংগ্রহে ও কলমেঃচিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খুলনা আর্ট একাডেমি
তারিখঃ১৩-০৬-২০২৩