সন্দ্বীপ কুমার ঘোষ
বাবা তোমাকে আজ বড়ো মনে পড়ছে
আর নির্জন গোপনে অশ্রুজল ঝরছে !
আমি কোনদিনই শোকে কাঁদি না
নিজের চোখে আপনজনদের অনেক মৃত্যু দেখেছি
শোকে মূহ্যমান হয়েছি বুকে পাষাণ বেঁধে !
বুঝতে শিখে প্রথমে জ্যেঠিমার মৃত্যু দেখেছি
ছোটবোন আন্না ঘোষের মৃত্যু দেখেছি !
প্রিয় ঠাকুর দার জ্যাঠা মহাশয়ের মৃত্যুও দেখেছি !!
কিন্তু আমি কাঁদিনি কখনোই কাঁদিনি !
গর্ভধারিনী জননীর মৃত্যুর দিন ছিল ৫ ই নভেম্বর/২০০২ খ্রিঃ
সেদিন আমার হৃদয়টা এক অজানা আশংকায় ছিল !
সারাটা দিন কর্মের মাঝেও মনটা ছটফট করছিল
সেদিন বুঝিনি চিরতরে আমি মাতৃহারা হবো !
আমি আর মা নামে ডাকতে পারিনি বিশটি বছর
ঘরে এসে মা নামের অভাগিনী রে দেখতে পাই না !
তাই ভুলে থাকি আর গোপনে আড়ালে অশ্রুজল ঝরে।।
আমি কাঁদি না, হৃদয় গহীনে শুধু কষ্ট অনুভূত হয় !
তবু তুমিতো ছিলে বাবা ! তাও হারিয়েছি চার বছর
আমি এখন সম্পূর্ণ অভাগা পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ !
ভুলে থাকতে চাই এই হারানোর ব্যথা অকপটে
কিন্তু পারিনা ! পারিনা মনকে মানাতে !
তোমার কিছু একগুঁয়েমি স্বভাব আমাকে পীড়া দিতো
আমি তোমার একটি পুত্র সন্তান ছিলাম এ-ই কূলে
কিন্তু পারিনি তোমার সেবা করতে যথেষ্ট প্রতুলে।।
কি জানি হঠাৎ করে নির্জন নিরালায় হৃদয়টা
ক্ষণিকের অবচেতনে দুমড়ে মুচড়ে উঠে হয় চৌচির !
তখনই স্মৃতির দুয়ারে তোমার ছবিটি ভাসে
তোমার মৃত্যু দিনের ছবিটি চোখের জলে ভেজে
তখনই মনে পড়ে তুমি নেই এই ভূবণ মাঝে !
আর আমি দূর্বল হয়ে পড়ি একাত্মতায়
আমি অনুভব করি পিতা হারানোর শোক !
আর চোখের জল লুকিয়ে আকাশের দিকে তাকাই অপলক !!
আজও সেইরকমই অনুভূত হচ্ছিল গোধূলি সন্ধ্যায়
তখন আমি বাড়ি ফেরার পথে ছুটছি গাড়িতে
কি জানি হঠাৎ পড়লো মনে তোমাকে বাবা !
তুমি ছোটকালে আমাকে অনেক শাসন করেছ
অন্যায়ভাবেও আমাকে অনেক নিষ্ঠুরভাবে মেরেছ
তাতে আমি কোনদিনই কষ্ট পাইনি সেরকম !
কিন্তু বাবা নামের মানুষটির অন্তর্ধ্যানে এতো বেশি কষ্ট !
তা অনুভূত হচ্ছে শোক বহ্নিতে হৃদয় জ্বলে স্পষ্ট।।
আজ বুঝেছি পৃথিবীতে আমি একেবারে একা
মাথার উপর ছায়া নেই বাবা নামের সেই বটবৃক্ষের !
নেই জননীর ক্রোড়ের স্নেহ মায়া মমতা
নেই খোকা নামে ডাকের আদুরে ফুলঝুরি !
নেই পৌষ পার্বণের সেই মমতামাখা পিঠা পুলি
একটি অভিমান করেই এসব শোক ভুলে থাকি
তবুও তোমাকে জননীকে স্মরণ করি অহরহ !
মুছে ফেলিনি তোমাদের সেই স্নেহমাখা বিগ্রহ।