রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা অফিস থেকেঃ
গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি আরও বেড়েছে। ফলে নেত্রকোনার কংস, ধনু, উব্দাখালী, সোমেশ্বরীসহ বিভিন্ন ছোট বড় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।আজ (৩ জুলাই) সোমবার নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর তথ্যসূত্রে সকালে উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গতকাল রবিবার বেলা দেড়টার দিকে ওই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।সরেজমিনে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলা মোড়-মুক্তিরচর, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধারা, কলমাকান্দা-বিশরপাশা পাকা রাস্তা, গোরস্থান-সাউদপাড়া, গজারমারী-খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও কাঁচা রাস্তাসহ আরও অন্তত ১৫টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।এদিকে নদীর পানি বাড়ায় কলমাকান্দার অন্তত ৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ তলিয়ে গেছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, বীজতলাও প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করেছে প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো মানুষ আসেনি।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, কলমাকান্দায় ১৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-১, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ অন্তত ৫৬টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে।খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, তার ইউনিয়নের চারটি রাস্তায় পানি উঠেছে। কলমাকান্দা-গোবিন্দপুর সড়কের বাউসাম রুমালীর বাড়িসংলগ্ন এলাকায় সড়কটির কিছু অংশ পানিতে ভেঙে যায়। তিনি এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় সড়কটির মেরামত করা হচ্ছে।পোগলা ইউপির চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক জানান, ইউনিয়নের কালাকোনা, জীবনপুর, গোয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকে নেত্রকোনাসহ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওই সময়ে নেত্রকোনায় বৃষ্টিপাত হয় প্রায় ৪৫ মিলিমিটার। এতে জেলার ছোট বড় সব নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। এর মধ্যে রবিবার দুপুর ২টার পর থেকে উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে।এছাড়া ওই উপজেলার মহাদেও নদ, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি এসেছে। পানিতে প্রায় ১৭টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছচাষিরা।কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য হট নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।