শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

তাজউদ্দীন আহমদ :বাংলার নেপথ্য কারিগর।

Sanu Ahmed
  • Update Time : সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩
  • ৭০ Time View

 

 

মো.জাকির হোসেন রিংকু

 

কলাম: মো. শাহ জালাল।

তাজউদ্দীন আহমদ :বাংলার নেপথ্য কারিগর।

পৃথিবীর অধিকাংশ স্বাধীন দেশ বা রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় নেপথ্যে একজনের অগ্রণী ভূমিকা বিদ্যমান থাকে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে হযরত আবুবকর (র),উমাইয়া খিলাফতে আমর বিন আস, আব্বাসীয় খিলাফতে আবু মুসলিম খোরাসানী, ফাতেমীয় খিলাফতে আবু আবদুল্লাহ খিলাফত তথা স্বাধীন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তদ্রুপ স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠায় তাজউদ্দীন আহমদ তেমনই একজন দক্ষ কারিগর ও সংগঠক। ইতিহাসে লেলিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ট্রটস্কি ও সুলতান সোলেমানের ইব্রাহিম পাশার মতই বাংলাদেশের জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।

কাপাসিয়ার উর্বর ও লাল মৃত্তিকার অপূর্ব সমন্বয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এক নৈসর্গিক ও নান্দনিক পরিবেশ কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রাম। শীতলক্ষ্যার শীতল হাওয়া ও বয়ে যাওয়া কল কল ঢেওয়ের সাথে পাখ পাখালির ডাক চির সবুজের এ গ্রাম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরদিন। কেননা এখানেই ঐতিহাসিক

স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলবী ৃুমুহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুন্নেছার চার ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন চতুর্থ।

 

শিক্ষা জীবন:

প্রথম আরবি পাঠ দিয়ে বাবার কাছেই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৩৪ সালে ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ও চতুর্থ শ্রেণীতে কাপাসিয়া এম ই স্কুলে এবং ষষ্ঠ শ্রেণীতে এম ই স্কলারশিপ পরীক্ষায় ঢাকা জেলায় প্রথম হন।১৯৪৪ সালে সেন্ট গ্রেগরীজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ, ১৯৪৮ সালে আই এ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী, ১৯৬৪ সালে আইনশাস্ত্র সমাপ্ত করেন।

 

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ :

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়।

১৯৪৩ সালে মুসলিমলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে তিন বারের সাধারণ সম্পাদক, যুক্তফ্রন্ট থেকে এম এল এ (ছাত্রাবস্থায়) ও সংসদ সদস্য, এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী । প্রথম সংসদে বাজেটকারীর উপাধিটাও তাজউদ্দীন আহমদের। নিজের স্কলারশিপের টাকা খরচ করে পর্যন্ত দলের কাজে ব্যয় করেছেন।

 

মুক্তিযুদ্ধ ও তাজউদ্দীন আহমদ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অপারেশন বিগবার্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ভারতের সহায়তায় মুজিবনগর সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কে স্বাধীন করার জন্য দক্ষ নাবিকের ভূমিকা পালন করেন। তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন নাই। তাজউদ্দীন আহমদ যদি ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে যদি ভারতে না যেতেন তবে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ত ভিন্নভাবে লিখা হত।

 

মুজিবনগর সরকার ও তাজউদ্দীন আহমদ :

হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র শীর্ষক ৪ খন্ডই মূলত মুজিবনগর সরকার নিয়ে লিখা। কুষ্টিয়া জেলার জেলার মেহেরপুর থানার বৈদ্যনাথা তলা ভবের পাড়া গ্রামে এ সরকার গঠিত। ভবের পাড়া গ্রামের নাম পরিবর্তন করে তাজউদ্দীন আহমদ একে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ মুজিবনগর সরকার নামকরণ করেন। এবং এ সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম প্রস্তাব করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুই স্বাধীন বাংলার প্রথম রাষ্ট্রপতি ( বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দী থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়)।

শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় দেশ বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সহায়তা ও বিদেশি জনমতের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান তাজউদ্দীন আহমদ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও তাজউদ্দীন আহমদ :

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনী আল বদর, আল শামস ও রাজাকারের সহায়তায় মোট ১১১১১ জনকে হত্যা ও গুম করে। (সূত্র : বাংলাপিডিয়া)

তবে ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়া এ দিনটিকে শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

 

বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ:

মুক্তির সংগ্রাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। ঠিক তেমনি একইভাবে বঙ্গবন্ধু -মুক্তিযুদ্ধ-তাজউদ্দীন আহমদ একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হচ্ছে বাংলাদেশের স্থপতি এর কারিগর হচ্ছে তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও তাঁদের মধ্যে কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় নাই। ঐ সময় প্রধান প্রধান শক্তিগুলো তাঁকে অনেক লোভ দেখিয়েছিল। সামরিক বাহিনী ও তাজউদ্দীন আহমদের দিকে চেয়ে ছিল কোন ইশারার আশায়। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমেদের উত্তর ছিল” শেখ সাহেবের নেতৃত্বে যে কোন পরিবর্তনের প্রয়াসে তিনি যুক্ত হতে প্রস্তুত, তাঁকে বাদ দিয়ে কোন পরিবর্তনের কথা তিনি চিন্তা করতে পারেন না”।( তাজউদ্দীন আহমদ :একটি উজ্জ্বল স্মৃতি, গোলক মজুমদার)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল অসামান্য সম্মোহনী শক্তি আর তাজউদ্দীন আহমদের ছিল অগাধ অনুমান নির্ভর জ্ঞান এ দুয়ের সমন্বয়ে এক পারফেক্ট কম্বিনেশন তৈরি হয়েছিল। যার নির্যাসমিশ্রিত ফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে। অর্থাৎ তাজউদ্দীন আহমদ ও বঙ্গবন্ধু ছিল সম্পূরক।

 

তাজউদ্দীন আহমদ ও তাঁর কূটনীতি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতিতে তাঁর মত কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিরল।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় politicians are divided into two classes:Demagogues and political Diplomats. গতানুগতিক রাজনীতিতে political Demagogue এর অভাব নেই, কিন্তু political diplomat এর জন্ম হয় কালেভদ্রে। তাজউদ্দীন আহমদ একাধারে political diplomat এবং political demagogue. তিনি political demagogue হবার রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়েছেন তৎকালীন প্রবীণ৷

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102