শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন

বিষয় : মহররম – পবিত্র আশুরা

Saddam Uddin
  • Update Time : বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩
  • ৫৭ Time View

 

 

নূর হায়দার জামান৷

বাংলাদেশের দিনপঞ্জিতে তিন ধরনের সালের হিসাব রাখা হয়- ১. খ্রিষ্টীয় সাল ২. বাংলা সাল ৩. হিজরি সাল। আমার আলোচনাটা হিজরি সাল নিয়ে। এখন চলছে ১৪৪১ হিজরি সালের মহররম মাস। মহররম হলো চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাস। বিশ্বের সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এই মাসটি খুবই মহিমান্বিত। কারণ, এই মহররম মাসেরই একটি গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ, মর্যাদাবান, মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং স্মরণীয় ও বরণীয় দিন বা তারিখ হচ্ছে ১০ই মহররম বা পবিত্র আশুরা। আশুরা মানে দশম তারিখ। ইসলামী পরিভাষায় মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার এই দিনে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যে, যার কারণে এই দিনটি এতটা মর্যাদাবান দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী ভাষ্যমতে জানা যায় – ১. এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা প্রথম বা আদি মানব হজরত আদম (আ)- কে সৃষ্টি করেছেন, এই দিনেই হজরত আদম (আ) পৃথিবীতে আগমন করেন, এইদিনেই তাঁর তাওবা আল্লাহতায়ালা কবুল করে নেন। ২. এইদিনে হজরত নূহ (আ)- এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায় এবং তাঁর কিস্তি বা নৌকা তুরস্কের জুদি নামক পর্বতে গিয়ে থামে। ৩. মুসা (আ) এইদিনে সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফিরাউনের জুলুম থেকে উদ্ধার করে তাঁদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন এবং ফেরাউনের সলিল সমাধী ঘটে। ৪. এদিনেই হজরত ঈসা (আ) জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ৫. হজরত আইয়ূব (আ) এদিনেই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন। ৬. হজরত ইবরাহীম (আ) এদিনেই জালিম বাদশা নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন। ৭. এদিনেই হজরত ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। ৮. এদিনেই হজরত সুলায়মান (আ) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। ৯. এদিনেই হজরত ইয়াকুব (আ) তাঁর হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ)-কে ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন।

 

ইসলামী ইতিহাস বা ইতিহাস ঘাটলে হয়তো এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তথ্য আমরা পাব। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সর্বশেষ ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ, মহানবী (স)-এর ওফাতের অর্ধ শতাব্দী পর ৬২ হিজরির ১০ই মহররম শুক্রবার ইরাকের কুফা নগরীর ফুরাত নদীর কূলে অবস্থিত কারবালার প্রান্তরে এজিদ বাহিনির হাতে নবী-বংশের ৭০-৭২ জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও সঙ্গী-সাথীসহ রাসুল (স)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন (র)-এর অত্যন্ত করুণভাবে শাহাদত বরণের মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার কারণে আশুরার এই দিনটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটিই আশুরাকে বহুল পরিচিত ও শোকাবহ করে তুলেছে। মানবতার ইতিহাসে এটি অত্যন্ত বিয়োগান্তক ঘটনা। আশুরা এলেই আমরা যেন শুনি কারবালার কান্না। এদিনটি তাই মুসলিম বিশ্বের আন্তর্জাতিক শোক দিবস।

 

শুধু শোক দিবস বললে ভুল বলা হবে। ওইদিন থেকেই প্রতিটি আশুরা ও শোহাদায়ে কারবালা দিবস মুসলিম বিশ্বের জন্য সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নতুন পথ, নতুন জীবন তৈরির অনুপ্রেরণা; আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে, ভয়কে জয় করে, অন্যায়-অবিচার-শোসন-জুলুমের কাছে মাতা নত না করে, বরং তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার (প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করে হলেও) মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ তৈরি করণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করা অর্থাৎ সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার মহতী শিক্ষা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। আমরা যদি এই মহতী শিক্ষাগুলো নবীপ্রেম, ধর্মনিষ্ঠা, আত্মত্যাগ, দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য পালন, ভোগ নয় ত্যাগেই সুখের সন্ধান এবং মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে পারি, তাহলেই সমগ্র পৃথিবীতে পরিপূর্ণরূপে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সত্য ও ন্যায়ের জয় হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102