গোপালগঞ্জ জেলার গান্ধিয়াশুর গ্রামে থেকে সুনির্মল দাস বাপী আজ বিকালে খুলনা আর্ট একাডেমিতে আসেন। তখন উপস্থিত মতে এই গুণী মানুষকে ফুল এবং কলম, পেন্সিল স্মৃতি স্বরুপ উপহার দেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক শিলা বিশ্বাস, শিশু শিল্পী সম্প্রীতি বিশ্বাস।লোকজ বাদ্যযন্ত্রের কারিগরের
সাথে ২০২০ সাল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচয় হয়।সেই থেকে নিয়মিত তার সাথে কথা হয়। খুলনা আর্ট একাডেমির একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে যতটুকু করণীয় সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আজ তার উপস্থিতিতে আমরা অনেক আনন্দিত। আমি মনে করি এই পৃথিবীতে যত গুণীজনরা আমাদের মাঝে চির অমর হয়ে আছেন সবাই তার মহৎ কাজের জন্য অমরত্ব লাভ করেছেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় একটাই জীবিত থাকতে তারা তাদের গুনো গান, তাদের সাফল্য মানুষ প্রশংসা করে না। এমনকি দেশের শিল্প খাত থেকেও কোনভাবে আর্থিক সহযোগিতা করে না।তবু থেমে থাকেনা শিল্প প্রেমী ব্যাক্তীরা। এ ধরনের সাধনা যারা করেন তারা দেশকে ভালোবেসে বিনা স্বার্থে এই সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
আজ তেমনি একজন গুণী সন্তানের কথা তুলে ধরবো। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায় আমাদের লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন তার কথা লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না। আপনাদের কাছে হয়তো মনে হবে এটি গল্প।যারা পত্রপত্রিকা বা মিডিয়ায় খবর দেখেন তারা হয়তো তাকে ভালো করেই চিনবেন। বা শিল্পাঙ্গনের সাথে যারা জড়িত আছেন তারা সবাই তাকে চেনেন।তার মত একজন গুণী মানুষ আজ পড়ন্ত বেলায় খুলনা আর্ট একাডেমির আঙিনায় ছুটে আসেন গোপালগঞ্জ থেকে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। তিনি নিজ হাতে ৭৫ রকমের বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছেন এবং নিজের সংগ্রহশালায় দুই শতাধিকের মত বাদ্যযন্ত্র সংরক্ষণ আছে ।এখন বুঝতেই পারছেন তিনি আমাদের দেশের লোকসংস্কৃতির একজন কারিগর বললে আমরা ভুল করবো না। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে চির অমর হয়ে বেঁচে থাকার জন্য শিল্পচর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার বিকল্প আর কিছু নেই। আমি বলব এই গুণী সন্তান বা একজন শিল্পী প্রত্যেকটা বাড়ি বাড়ি জন্মগ্রহণ করেনা। ইতিহাসের গবেষণা অনুযায়ী ১০০ বছর পর পর একজন গুণী সন্তানের জন্ম হয়। তাই খুলনা আর্ট একাডেমির পক্ষ থেকে তার এই মহৎ উদ্যোগ এবং তার শিল্প সাধনাকে সাধুবাদ জানাই। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য তাকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আসুন তার সম্পর্কে আমরা একটু জানার চেষ্টা করি।তার পিছনের কিছু ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি। তার কাছে জানতে চাইলাম এই সুন্দর প্রতিভা এবং এত বাদ্যযন্ত্র বাজাবার পিছনে কারো সহযোগিতা আছে কিনা। তিনি তার সকল গুরুদের প্রণাম জানিয়ে তাদের নাম গুলো প্রকাশ করেছেন। তার ভক্তি শ্রদ্ধা অতুলনীয় এবং প্রশংসনীয়। আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস একজন শিল্প সাধক ব্যক্তি তাই শিল্প সাধনা করতে গিয়ে নানান ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি। সুনির্মল দাস বাপীর সাথে করোনা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে একাধিকবার ফোনে এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা হয়েছে। সরাসরি আজ উপস্থিত হল আমার স্বপ্নে গড়া প্রতিষ্ঠান খুলনা আর্ট একাডেমির প্রাঙ্গনে। বিষয়টা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।আমাকে অত্যন্ত সম্মানের সহিত দাদা ডাকেন আমিও তাকে স্নেহের ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসি।আশা করি তার সঙ্গে যে বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে আমৃত্যু পর্যন্ত কখনোই ছিন্ন হবে না এই বন্ধন। আপনারা সবাই এই শিল্পপ্রেমী মানুষের জন্য শুভ কামনা করবেন।আসুন এবার এই গুণী সন্তানের সম্পর্কে আমরা কিছু জানার চেষ্টা করি।প্রথমেই তার পিতা-মাতাকে প্রণাম জানাই তাদের আদর্শ দিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার গান্ধিয়াশুর গ্রামে সুনির্মল দাস বাপী বাড়ি। জন্ম ১৯৯৩ সালে এক মধ্যম পরিবারে। পিতা সুনীল কুমার দাস অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। চার ভাই বোনের মধ্যে সুনির্মল দাস বাপী সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই বাবা কাকার সাথে বিভিন্ন কীর্তন, বাউল, হরিসভা, কবি গানের মাধ্যমে সুনির্মল দাস সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ করেন। অনেক ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে একতারা বাজানো শেখেন। কাকার কাছ থেকে শেখেন ঢাক বাজানো। বাড়ির পাশে বর্ষিয়ান কারু শিল্পী দাদু বিজয় পাণ্ডের কাছ থেকে প্রথমে দোতারা, বেহুলা সহ প্রভৃতি লোকজ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা শেখেন। পরবর্তীতে বিটিভি ইত্যাদি ম্যাগজিন অনুষ্ঠানে খুলনার গুরুজী নিখিল কৃষ্ণ মজুমদারের একটি প্রতিবেদন দেখে এ কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় । পরে এগুলো তৈরি ও বাজানোর তালিম নেন। গোপাল শর্মার কাছ থেকে ঘোমক, বাসু বালার কাছ থেকে বেহুলা,নিরাঞ্জন ওস্তাদের কাছ থেকে সরজ, অমিতোষ বিশ্বাস ও ভবানী শংকর বিশ্বাসের কাছ থেকে তবলা বাজানোর হাতে খড়ি নেন। গোপালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে তিনি বর্তমানে সুভাষ স্যারের কাছ থেকে তবলা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সুনির্মল দাস বহু প্রতিভার অধিকারী। একাধারে তিনি বহু লোকজ বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন ও নিজে এগুলো তৈরি করতে পারেন। নানান আঞ্চিলিক ভাষায় কথা বলতে ও মুখাঅভিনয়ে বেশ দক্ষতা রয়েছে সুর্নিমলের । তিনি প্রায় ৭৫ রকমের বাদ্যযন্ত্র নিজে তৈরি করতে পারেন। নিজ বাড়িতে তৈরি করে দেন একটি লোকজ বাদ্যযন্ত্র গবেষণা কেন্দ্র।তার এই কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশের বহু টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে এসব প্রতিবেদন। ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও এগুলো প্রদর্শন হয়েছে। সুনির্মল দাস ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। টুঠামান্দ্রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১১ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাহুথড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকুরি রত আছেন। সময় পেলেই সুনির্মল এসব কাজ করেন। বিভিন্ন লোকজ যন্ত্রপাতি বাজিয়ে দর্শক মনোরঞ্জন করেন। ২০২২ সালে বাগেরহাট নজরুল ওস্তাদের কাছে বাংলা ঢোল প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢোল বাজানোর প্রতি আরো আগ্রহী হয়ে পড়েন। লোকসংস্কৃতি প্রসার বেড়ে যাক তাই এই আশা ব্যক্ত করেন সুনির্মল দাস।চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস সবাই বলেন এই শিল্প প্রেমী ব্যক্তির জন্য সবাই শুভ কামনা করবেন এমন প্রত্যাশায় খুলনা আর্ট একাডেমির সকল ভক্তবৃন্দ।তারিখঃ০২-০৮-২০২৩