শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

নু পু র আশিক রুহান৷ 

Saddam uddin Raj
  • Update Time : রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৩৭ Time View

 

হাটতে হাটতেই শার্টের হাতায় কয়েকবার কপালের ঘাম মুছে নিল আলোমগীর।। নিজের একাকিত্ব দূর করতে মনে মনে গুন গুন করতে লাগলো। জ্যোৎছনার আলো-আঁধারির মধ্যে ঘরটির পাশ দিয়ে যাওয়ায় সময় শরীরটা ভারী হয়ে এলো তার। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ খাড়া হয়ে উঠলো, দম বন্ধ করা পরিবেশের বুক ফুড়ে আলোমগীরের কানে এলো সেই শব্দটা…….

 

মাঝারি আকারের নদীটির ধারেই আলোমগীরদের গ্রাম। নদীর তীরেই হাট বসে ওদের আজকে হাটে আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে ওর। সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। দেখে মনে হচ্ছে একগুছ রকজবা একই সাথে ফুটে রয়েছে।

 

বাজার করা শেষ করে আলোগীর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো, ততোক্ষনে সূর্য ডুবে গিয়ে পূর্নীমার চাঁদ গাছের মাথা থেকে ঊকি দিচ্ছে। আজ বাতাস বন্ধ, কোনো এক অজানা আতংকে চারপাশটা যেন আজ একটু বেশিই স্তব্ধ লাগলো ওর কাছে। ভেপসা গরমে জামার কয়েকটা বোতাম খুলে হাটতে লাগলো ও , আজ রাস্তায় ও কাউকে দেখা যাছে না। আলো-আধারীর মধ্যে দিয়ে হঠাৎ ওর চোখে পড়লো প্রায় আধমরা কুযো-বুড়ির মতো পড়ে থাকা জীর্ণশীর্ণ স্কুলঘরটি, বাড়ি যেতে হলে এর পাশ ঘেসেই যেতে হবে ওকে।

 

সন্ধার পর কোনো লোক তেমন একটা এদিক মুখো হয় না। লোকমুখে শোনা যায় অনেকদিন আগে এই স্কুলের একটা ঘরে একটা মেয়ে নাকি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো এবং তারপর থেকে সন্ধার পর এখানে মাঝে মাঝেই কিসব অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার ঘটে। আলোমগীর আবার এসব বিষয়ে তেমন কান দেয় না। ” কবে কে মরেছে, আদৌ এই গল্প সত্য কিনা তার ঠিক নেই, তার উপর আবার মেয়েটার ভূত স্কুলের ঘরে নেত্য করে… ধুর !! যতোসব আষাঢ়ে গল্প ”…. এসব ভাবতে ভাবতে একে বারে স্কুলের কাছে চলে এসেছে ও। কোনোকিছু না ভেবেই স্কুলের সীমানায় ঢুকে পড়লো আলোমগীর। হঠাৎ একটা অপ্রত্যাশিত শব্দে মনের অজান্তেই বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো ওর। কোথা থেকে যেন ভেশে আসছে মৃদু কিন্তু খিলখিল হাসি ও তীক্ষ্ণ নুপুরের আওয়াজ।

 

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জামার পকেট থেকে দেশলাইয়ের বাক্স বের করে একটি কাঠি জ্বালালো সে। সেই আলোতেই শব্দের উৎস খুজতে লাগলো আলোমগীর। অজানা বিস্ময়ে ও কৌতূহলে যেটুকু ভয় দানা বেধেছিল তাও যেন উড়ে গিয়েছে মন থেকে। শব্দটা প্রতি মুহূর্তেই যেন তার দিক ও মাত্রা পরিবর্তন করতে লাগলো । ওর মনে হতে লাগলো একটা মেয়ে যেন নুপুর পায়ে পুরো স্কুলময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে ও হাসছে।

 

শব্দের উৎস খুজতে খুজতে একটি ঘরের সামনে আসতেই ওকে আবার অবাক করে দিয়ে শব্দটি বন্ধ হয়ে গেল । ঘরের মধ্য উকি দেয় আলোমগরি। ঘর পুরো ফাকা….. কোথাও কিচ্ছু নেই, ভাঙা চালের ভিতর দিয়ে চাদের আলো উকি মারছে শুধু। গলার স্বরটা একটু উচু করে ও বললো-“কে আছিস এখানে? শহস থাকলে আমার সামনে আয়। যদি তুই মনে করে থাকিস এভাবে আমকে ভয় দেখাতে পারবি, তাহলে এটা তোর মনের ভুল। “…. কোনো জবাব এলো না, চারিপাশ যেন দম বন্ধ করার মতো নিস্তব্ধ।

 

এক পর্যায়ে কোনো উত্তর না পেয়ে তার মনে হলো নিশ্চই কোনো বেয়াদর তার সাথে মজা করছে।

 

আবার বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো আলোমগীর, হঠাৎ পায়ে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে চমকে উঠলো সে, ও দেখলো লোমশ জন্তুটার সবুজ চোখদুটো আগুনের গোলার মতো জ্বলছে। অদ্ধকারের মধ্যেও সে বুঝতে পারলো জন্তটি একটি কুচকুচে কালো বিড়াল। নাকিসুরে ডাকছে বিড়ালটা আর ওর পায়ের সাথে জড়াচ্ছে। বিড়ালটি বার বার চেষ্টা করছে আলোমগীরের দু’পায়ের মাঝ দিয়ে গলে যেতে।।

 

এবার বেশ বিরক্ত হলো ও, লুঙ্গীটা ঠিক করে পড়তে পড়তে, বিড়ালটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

 

এসবের মধ্যে হঠাৎ আতংকের একটা বরফ শীতল স্রোৎ বয়ে গেল ওর শিরদাঁড়া দিয়ে। ওর কানে এলো একটি স্বর…..ওর মনে হতে লাগলো এ স্বর কোনো জীবিত মানুষের হতেই পারে না ও শুনতে পেল তার পিছন থেকে সেই হাড় হিম করা গলায় কে যেন বলছে– ” আজকের মতো তুই বেচে গেলি কিন্তু, সাবধান………”!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102