শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

প্রসঙ্গ:-__”বর্তমান সমাজে যৌতুক বরের জন্মগত অধিকারের চেয়ে কম নয়।”

Sanu Ahmed
  • Update Time : রবিবার, ২ জুন, ২০২৪
  • ৬৩ Time View

✍✍_মো:ওসমান হোসেন সাকিব
________________________________________
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি।যুগ যুগ ধরে যৌতুকের এই বিষাক্ত ছোবল থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না।বর্তমান সময়ে ও তার রেশ আমাদের সমাজে বহাল রয়েছে।

সমাজে কিছু অতি আবেগী ব্যক্তিবর্গের কন্যার বিয়েতে বরপক্ষকে যৌতুক দিয়ে এমনভাবে আশীর্বাদপুষ্ট করে,মনে হয় তারা তাদের কন্যাকে এমন স্বামী হাতে তুলে দিচ্ছেন যিনি জন্মগতভাবে অক্ষম।কি একটা বেহাল দশা।আমার কথা হচ্ছে,আপনার আর্থিক সার্মথ্য আছে আপনি দিচ্ছেন,আপনার এবং বরের আত্মীয়-স্বজনকে উদরপূর্তি করে খাওয়াচ্ছেন;কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিষয়টি সমাজে রীতি হয়ে যাচ্ছে।এখন কথা হচ্ছে,সমাজে তো ধনী-গরীব মিলে বসবাস।আপনার মত কি সবার সার্মথ্য আছে?আপনার অতি আবেগী আতিথেয়তার জন্য কি অন্যদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে না?এমনকি দেখা যায়,যৌতুকের জন্য অনেক উপযুক্ত মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না।

আজকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায়,বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একমাত্র যৌতুকের কারণেই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিবাহিত দম্পতিরা।শিকার হওয়া দম্পতিদের পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায়,খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান।একেবারে বললেই চলে দিনে এনে দিনে খাই। যৌতুকের জন্য যে শুধু স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয় তা নয়,তারা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি,ননদ,দেবর ইত্যাদি ব্যক্তিমহলের ও পীড়নের শিকার হন।এই পীড়ন সহ্য করতে না পেরে অনেক দম্পতিরা নিজের জীবন বিসর্জন দিতে ও কুণ্ঠবোধ করে না।

বাংলাদেশের সকল জায়গার থেকে আমাদের চট্টগ্রামেই যৌতুকের হয়রানিগুলো বেশি হয়।কারণ,ইদানিং যৌতুকের মত এই ঘৃণিত বিষয়ের জন্য কয়েকটা নব-দম্পতির মৃত্যু ঘটনা ও ঘটেছে এই চট্টগ্রামে।যা পেপার-পত্রিকা পড়ে সবার কাছে আলোচিত বিষয়ে দাড়িয়েছে।
এইরকম একটা সম্প্রতি ঘটনা ঘটেছে আমাদের চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে।কি যে নাজাহাল দম্পতির উপর।যৌতুকের জন্য শ্বাশুড়ির কি রকম অত্যাচার,পাশাপাশি ননদ আর দেবরের একই কারণে নির্যাতন।শেষমেশ,এই দম্পতির মৃত্যর কোলেই ঢলে পড়ে।এইরকম অসংখ্য ঘটনা দৈনন্দিন পত্রিকায় আসে।যা দেখে খুব কষ্ট লাগে।

বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় উঠে আসা ভুক্তভোগীদের জবানবন্দিতে বুঝা যায়,বিয়ের পর ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের চাওয়া থাকে মোটা অঙ্কের একটা টাকা।ফার্নিচার হিসাবে খাট,আলনা,ওভারড্রপ,ওয়ারশোকেজ,সোফা,স্টিলের আলমারি,ফ্রিজ,টিভি,এসি ইত্যাদি।স্বামীর চাওয়া হিসাবে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে আরো কত কিছু!যার শারীরিক -মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।যা দিতে বাধ্য করা হয় কন্যা পক্ষের লোকজনকে।অনেকসময় দেখা যায়,কন্যাপক্ষ ওয়ারিশ একটু স্বাবলম্বী হলে মেয়ের সংসারের ভালোর জন্য সবকিছু পূরণ করেন।কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন,যখন দেখা যায় কন্যাপক্ষ পিতা-মাতা,ভাই-বোন স্বাবলম্বী না।তখন আরো কড়াভাবে দম্পতির উপর পীড়া শুরু হয়।যৌতুকের নেশায় বরপক্ষ এমন আসক্ত হয়ে যায় যে, একসময় গিয়ে দম্পতির উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।সর্বশেষে ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস এমন হয় যে,কন্যাটির না হয় মৃত্যু হয়;নতুবা সংসার ভেঙ্গে যাই।

বতর্মান সময়ে যৌতুকের বিষাক্ত ছোবলে নির্মম বলির শিকার হচ্ছেন,দরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলো।আমার কথা হচ্ছে আপনি বিবাহ করবেন,কেন পিতা-মাতা,ভাই-বোন,বোনের জামাইর কথায় আপনার লক্ষ লক্ষ টাকা যৌতুক নিতে হচ্ছে?কেন আপনার ঘর বাধার জন্য কন্যার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতে হচ্ছে?আপনার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য বিয়ের মত একটা সুন্নত কাজকে উপক্রম করে মোটরসাইকেল,গাড়ি ইত্যাদি নিতে হচ্ছে?আপনার ঘরকে সাজানোর জন্য কেন কন্যাপক্ষের কাছ থেকে খাট,সোফা,আলমারি,টিভি,ফ্রিজ ইত্যাদি নিতে হচ্ছে?আপনার পাড়া-প্রতিবেশি মন রক্ষার জন্য কেন কন্যাপক্ষের অপারগতার মধ্যে ও ৭/৮ আইটেমের খাবার জবরদস্তি খেতে হচ্ছে?আপনার বোনের জামাইরদের মন রক্ষার জন্য নিজের মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে ৪/৫ টা আংটি আদায় করতে হচ্ছে?

তাহলে,আপনার মূল্যবোধ কোথায়?আপনার বিবেক কি এতই লোপ যে যে,পরিবারের অন্যদের মন রক্ষায় নিজের মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে?আপনি কি একবার ও চিন্তা করেছেন,আপনি বিয়ের নামে এইসব কিছু কোন অধিকারের চাচ্ছেন?আপনি কি মনে করছেন,এটা আপনার জন্মগত অধিকার?নাকি আপনি আল্লাহর দেওয়া পুরুষোত্তের অহংকার দেখাচ্ছেন?

আসুন,
আমরা মানুষকে মানুষ হিসাবে চিনি।সাময়িক সময়ে জন্য আপনার মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে কেন পশুর মত আচরণ করবেন।বিবাহ করা সুন্নত।আপনি সুন্নতের মত কাজটিকে সাবলীলভাবে না করে কেন মিন্নতের মত করে ফেলছেন?আপনি যেইরকম আপনার মা-বাবার আদরের সন্তান,ঠিক তেমনি আপনার হবু স্ত্রী টি ও ওনাঁর মা-বাবার আদরের সন্তান ছিল।সবাইকে মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করি।যৌতুকের মত কাজকে ঘৃণা করি।ইসলামি শরিসম্মত,যৌতুক দেওয়া-নেওয়া হারাম।এই হারাম কাজকে আমরা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করি।সমাজের সর্বস্তরের কাছে যৌতুকের আদান-প্রদানের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করি।যৌতুকের বিরোধী আন্দোলনে তরুণদের বেশি সম্পৃক্ত করি।

—-“পরিবার,সমাজের সম্প্রীতি থাকবে বেশ:যৌতুক হলে নিরুদ্দৈশ।”

____________________________________________
লেখক:_____প্রাবন্ধিক,গবেষক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102