শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

সুসভ্য জাতি হওয়া একান্ত জরুরী

Sanu Ahmed
  • Update Time : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ৩৬ Time View

মিজানুর রহমান মিজান

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় বলে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে।এ পৃথিবীতে অনেক দেশ, জাতি ও সমাজ রয়েছে। মানুষের আচার-আচরণে ও রয়েছে ভিন্নতা। আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পেয়েছি স্বীকৃতি। উন্নত দেশগুলোর পথে আমরা উন্নীত হবার দৃঢ় আশায়, প্রত্যাশায় এগিয়ে যাচ্ছি বা তার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিনরাত আত্মবিশ্বাসী হবার স্বপ্ন দেখি, সফলতার সুচনা করতে চাই।সুন্দর এ পৃথিবীর বুকে বহু জাতি, সভ্যতার উত্থান হয়েছে। আবার অনেক জাতি, সভ্যতার পতনের ও নিদর্শন রয়েছে। হারিয়ে গেছে অনেক কালের গহব্বরে। কিন্তু কেন হারিয়ে গেল?হারিয়ে যাবার পেছনের কাহিনী অনেক ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিকগণ খুজে পেয়েছেন, ঐ জাতি বা সভ্যতার নৈতিকস্খলন ও চারিত্রিক অধ:পতন।বিনাশের মুলে রয়েছে এ দু’টি কারন বিশেষ করে। একজন আরব সাহিত্যিক বলেছেন,“একটি জাতি যত দিন তাদের নীতি-নৈতিকতার ওপর টিকে থাকে তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকে, যখন এগুলির অবক্ষয় হয়, তখন তাদের পতন ত্বরান্বিত হয়”।সুতরাং আমরা বলতে পারি, চারিত্রিক গুণাবলী ও নৈতিকতাকে জাতি ও সভ্যতার চাবিকাঠি হিসেবে ধরে নিতে কোন প্রকার সংশয় থাকে না।একটি সুসভ্য জাতির শক্তি-সামর্থ্য তাদের বস্তুগত শক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির দ্বারা পরিমাপ করা হয় না: বরঞ্চ উত্তম চরিত্রে তাদের পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আল-কোরান এ আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট বলেছেন, “কোন জাতি যখন ঘৃণ্য অনৈতিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে,তাদের পতন তখন অনিবার্য”।অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন বা কোরানে বর্ণিত জাতি সমুহের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্টত: প্রমাণ মেলে “কোন জাতির উত্থান, অগ্রগতি ও অস্তিত্ব রক্ষায় চারিত্রিক ও নৈতিকতা অপরিহার্য”। আমরা আজ কোন পথে চলেছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সত্য, সততা, নীতি-নৈতিকতা থেকে হয়ে গেছি অনেক দুরের বাসিন্দা। আমাদের সমাজ ও জাতিকে গ্রাস করেছে অনৈতিকতা, মিথ্যা বলা, লোভ, হিংসা, স্বার্থান্ধ।আমরা যদি লক্ষ্য করি, তবে দেখতে পাই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত (স:) সততা ও সত্য বলার মুর্ত প্রতীক। তিনির সত্য ও সততায় মুগ্ধ হয়ে বিধর্মীরাও তিনিকে আল-আমীন বলে আখ্যায়িত করেছে।বিধর্মীরা তিনির চারিত্রিক গুণাবলীতে আকৃষ্ট হয়ে তাদের ধন-সম্পদ গচ্ছিত রাখতে কখনও কুণ্ঠিত হয়নি। সত্য ও সততার এমনি তেজোদীপ্ত আকৃষ্টতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কখনও সত্য থেকে বিচ্যুত হননি।তিনি সর্বক্ষণ মহান সত্ত্বা আল্লাহর প্রতি আস্তা ও অবিচল বিশ্বাস রাখতেন। আজ আমরা ইসলামী নৈতিকতা, নীতি,সৎ ও সত্য বলা বিসর্জন দিয়ে মিথ্যা, ভ্রান্ত ধারণা, অন্যায় অনাচারে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি বেশি। যেমন এইতো ক’দিন পূর্বে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সংবাদ সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই অবগত আছি। বিয়েতে অসম্মত হবার ফলে মা-মেয়েকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে নির্যাতন।এটা সবচেয়ে ঘৃণিত এবং প্রতিহিংসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সংবাদটি ফেসবুকে ভাইরাল হবার সুবাদে সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে।এ জাতীয় ঘটনার অনেক উদ্ধৃতি দেয়া যাবে। কিন্তু সব ঘটনা ভাইরাল হয় না। অনেকে লোকলজ্জায় বা ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারেন না। থেকে যায় অলক্ষ্যে, অন্তরালে, আড়ালে আবড়ালে। সাহেদ, শাবরিনা বেনজির ও শামীমের কথাই বলতে গেলে এসে যায় লোভের কথা।লোভের বশবর্তী হয়ে ওরা কত নিকৃষ্ট পথ অবলম্বনে ভেসে গেল। মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তুল্য। এত টাকা দিয়ে ওরা কি করবে, আর কি করতে চায়?মরণ চিরন্তন সত্য। তা থেকে রেহাই প্রাপ্তির কোন প্রকার সুযোগ নেই।আবার টাকা সঙ্গে নেবারও রেওয়াজ নেই।যে কবরে নিয়ে যাবে।করবেটা কি?তাদের আচার আচরণ থেকে সুস্পষ্ট একটি জিনিষ বেরিয়ে এসে, ধরা না খেলে আরো এ জাতীয় গর্হিত কাজ করে যেত। মানুষের প্রাণ নিয়ে খেলা, দেশের ভাবমুর্তি নিয়ে খেলা, একটি জাতি নিয়ে খেলা।আরো কত সাহেদ, শাবরিনা, শামীম রয়েছেন আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে।ওদের দেখতে মানুষের আকৃতি হলেও মানুষ নামের কলঙ্ক।বিবেক, মানবতা, মনুষত্ব, নীতি নৈতিকতা বিসর্জিতরাই অমানুষ নামে খ্যাতি লাভ করে। অঢ়েল সম্পদ গড়ে সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়ার প্রত্যাশা, আশা , আকাঙ্খা প্রতিফলন ঘটিয়ে লাভ কতটুকু ভেবে পাই না। সন্তান অঢ়েল সম্পদের মালিক হয়ে বখাটে, নেশাখোর, মাতাল হবার সম্ভাবনাই যথেষ্ট।অবৈধ, হারাম, ঘুষখোর হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার সুযোগ নেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে।।পরিশ্রমে হবে বিমুখ,হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা হারাম কাজে ব্যয়িতই হয় অধিক।সুফল, সুন্দর, ভাল কাজের আশা করা বাতুলতা।অনেক সন্তান পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখে, পিতামাতার আশ্রয় হয় সেখানে। সুতরাং সন্তানের জন্য সঞ্চিত অর্থ, অনর্থের কারন হয়ে দাড়ায়।আমরা পড়েছি মীর মোশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু গ্রন্থে,“অর্থ!রে পাথকী অর্থ, তুই সকল অনর্থের মুল” বলে আক্ষেপ করতে।এই অর্থের জন্যই পাষন্ড সীমার কারবালায় করুন কাহিনীর সৃষ্টিকারক।ফলাফল তো আমাদের জানা সবার। এতই ঘৃণিত যে শত শত বৎসর পরও মানুষ সেই নামটি শুনলেই ঘৃণায় ছি: ছি: করে। সুতরাং টাকার লোভে অনৈতিক, অন্যায়, অবৈধ পন্থা, মানবতা বহির্ভুত কাজকর্ম, অত্যাচার করা, করতে অনুপ্রাণিত হওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?নীতি বিবর্জিত কাজ করে সুখ,শান্তির আশা করা ও আরেক বোকামীর সামিল।আজ সাহেদ, শাবরিনা ও শামীমের কি কাজে লাগছে এ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ?সকলই বিফল, অযথা গেল সকল জল!
লোভ-লালসা, প্রতিহিংসা, অধিক প্রাপ্তির আশা যার মাথায় ও মনে স্থান করে নেয় সে হারিয়ে ফেলে ভালবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহ-মমতা।“লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু” এটি বহুল প্রচলিত একটি বাক্য।লোভাতুর মানুষ অধিক প্রাপ্তির প্রত্যাশায় চোখ থাকতে হয়ে যায় অন্ধ, কান থাকা সত্ত্বেও বধির, মানুষের আত্মা মরে যায়, আবেগ, অনুভুতি উধাও হয়ে যায়।মানবতা, মনুষত্ব, মানবিক আচার-আচরণ বিলুপ্ত হবার ফলে সমাজে, গোত্রে, বংশে শুরু হয় হানাহনি, মারামারি, কাড়াকাড়ি ইত্যাদি। এখন স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা বেশি বলে অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্ট হয়। এ সকল মন্দ কাজের আকর্ষনে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে যায় পরিবর্তিত। সে কোন কিছুকেই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে পায় না, স্বাভাবিক কোন কিছু শুনতে পায় না, স্বাভাবিক কিছু ভাবতে পারে না। কেমন করে অশান্তি সৃষ্টি করা যায়, সে ধান্ধায় লিপ্ত থাকে অধিক্ষণ। সে কাউকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, হা-হুতাসে ব্যস্ত সময় পার করা হয়ে উটে তার নিত্যসঙ্গি।তা শুরু হয় আপনজনের মধ্যে বিশেষ করে। যেমন ভু-সম্পত্তির ক্ষেত্রে। আপনা আপনার বৈরি। একটু লোভ, একটু স্বার্থ, একটু অধিক প্রাপ্তি এ হল মুলকারন। আদালতে যত মামলা তার বেশির ভাগ ভু-সম্পত্তি থেকে উদ্বুদ্ধ।অসভ্য মন মননশীল মানুষ নিজকে যেমন তিলে তিলে শেষ করে দেয়, তেমনি অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস করে ফেলে।এদের মাধ্যমে সামাজিক, পারিবারিক বন্ধন শীতল করে এবং বিশৃংখলার সৃষ্টিতে মানব সভ্যতার চাকা পিছনে টেনে অসভ্যতার দিকে টেনে নেয়।
মানব সভ্যতার সুচনা কালেও মানুষের মধ্যে দ্বন্ধের অস্তিত্ব ছিল, আছে এবং থাকবে।মানুষ যখন গুহায় বসবাস করত সে সময় মুলত: দ্বন্ধের সৃষ্টি হত শিকার করা পশুর ভাগ বাটোয়ারা এবং হাতিয়ার সমুহের মালিকানা নিয়ে।কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্ধ আরো প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে দেখা দেয়। অপরাধ প্রবনতাও বহু গুণে বেড়ে যায়। স্বার্থ, লোভ, প্রতিহিংসা, ক্ষমতা, তুচ্ছ অহংবোধ, দাম্ভিকতা ও দলাদলি এর মুল কারন বললে অত্যুক্তি হবে না। তাছাড়া ভু-সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা থেকে অনেক দ্বন্ধের সৃষ্টি হয় বলে আমার ধারণা।আর এ সব থেকে উত্তোরণ সম্ভব ধর্মীয় অনুশাসন, ধৈর্য, সহনশীলতা, আগ্রহ ও আন্তরিকতা।অস্বাভাবিক ও শত্রুভাবাপন্ন বিবদমান পরিবেশের স্থলে উদ্ভব হবে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সদ্ভাব।যার ফলে সৃষ্টি হবে একটি সামাজিক মজবুততর বন্ধন ও শক্তিশালী নিরাপত্তাবোধ।জয় হোক মানবতার, মনুষত্ববোধের। সুসভ্য জাতি গঠনে আমাদের ভুমিকা হোক চারিত্রিক উৎকর্ষতাপূর্ণ, নৈতিক শিক্ষা হোক আচার আচরণে প্রতিফলিত এ হৃদয়জ আর্তি।

লেখক মিজানুর রহমান মিজান,
কবি ও সাংবাদিক,
সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102